লেবেল

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

420 বা ৪২০ এই ডিজিট দ্বারা কি বুঝায়?

সাধারনত দুষ্টু প্রকৃতির কাউকে উদ্দেশ্য করে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই 420 এর উৎপত্তি কোথা থেকে?

বাংলার চারশ বিশ বা ইংরেজীর ফোর টোয়েন্টি হল প্রতারনার অভিযোগে অভিযুক্ত করার আইনের ধারা। কিন্তু এই সংখ্যাটা গাঁজা সেবনের সাথে জড়িয়ে আছে ৪০ বছরের ও বেশী সময় ধরে আমেরিকা কানাডা এবং পশ্চিমা বিশ্বের কোথাও কোথাও। 


বৃটেন এবং আমেরিকার প্রচলিত প্রথা এবং নিয়ম নীতির কিছু পার্থক্য চোখে পড়ার মত। যেমন তারিখ লেখার ক্ষেত্রে দিন প্রথমে, মাস মাঝ খানে, এবং সব শেষে বছর লেখা – এই নিয়ম টা চালু আছে বৃটেনে এবং প্রাক্তন বৃটীশ কলোণীর দেশগুলোতে। কিন্তু আমেরিকা , কানাডাতে এবং আরো অনেক দেশে প্রথমে মাস সংখ্যা , মাঝখানে দিন এবং শেষে বছর লেখা হয়। আজ ২০ শে এপ্রিল । বৃটেন এবং আমাদের দেশে ২০/৪/২০১২ লেখা হলেও আমেরিকা কানাডা তে লেখা হয় ৪/২০/ ২০১২। 


প্রতি বছর উত্তর আমেরিকার দেশ যুক্তরাস্ট্র এবং কানাডাতে ২০শে এপ্রিল পালিত হয় বিশেষ দিন হিসেবে। ২০শে এপ্রিল বা ৪/২০ এখন হয়ে দাড়িয়েছে ৪২০, এই দিনে আমেরিকা, কানাডার বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন পেশা এবং নেশার লোকেরা সমবেত হন গাজা খাওয়ার উৎসবে এবং গাজা খাওয়াকে বৈধতা দেওয়ার দাবী জানাতে। ৪/২০ তারিখের বিকাল ৪-২০ মিনিটে শুরু হয় গাঁজা খাওয়া। 


উতপত্তি- গাজা খাওয়া বা গঞ্জিকা সেবন রাস্তাফারিয়ান ধর্মের অবিচ্ছেদ্য অংগ । রাস্তাফারিয়ান ধর্মের অনুসারী বিশ্বনন্দিত সঙ্গীত শিল্পী বব মার্লির সাথে ৪২০ সংখ্যার কোন সম্পর্ক নেই। ২০শে এপ্রিল তার মৃত্যু দিন বা জন্ম দিন কোনটাই নয়। ৪২০ সংখ্যা গাজা নিষিদ্ধ বা বৈধ করা কোন আইনের ধারাও নয়। তবুও গাজার সাথে ৪২০ সংখ্যা আজ অবিচ্ছেদ্য। এপ্রিলের ২০ তারিখ ৪/২০ বা বিকেল ৪ঃ ২০ হিসেবে ও লেখা হয়ে থাকে । গাজার বৈধতা দাবীর দিন ২০ এপ্রিলকে গাজা দিবস বা "Marijuana Appreciation Day." হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ১৯৭১ সাল থেকে।

 সান রাফায়েল স্কুলে লুই পাস্তুরের মুর্তি। 

আজ থেকে ৪১ বছর আগে ১৯৭১ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান রাফায়েল হাই স্কুলের কয়েকজন কিশোর ছাত্র বিকেল ৪ টা বিশ মিনিটে একত্রে বসে গাজা খেত লুই পাস্তুরের মুর্তির পাদদেশে । তারা এত নিয়ম মাফিক এই কাজটা করত যে বিকেল ৪টা ২০ মিনিট বা ৪২০ সংখ্যা তাদের নিজেদের মধ্যে গাঁজা খাওয়ার সাঙ্কেতিক সংখ্যা হিসেবে পরিচিতি লাভ করল। পোস্টারে, বিজ্ঞাপনে ৪২০ সংখ্যা থাকলেই সবাই বুঝে নিত যে গাজা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে । অল্প কিছুদিনের মধ্যে ৪২০ স্কুলে , এবং আরো কিছু দিন পর সারা ক্যালিফোর্নিয়া হয়ে আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ল। আজ পালিত হচ্ছে ৪১ তম ২০ শে এপ্রিল গাজা খাওয়ার উৎসবের দিন। 

কানাডাতে গাজা উৎসব পালিত হল আজ। টরন্টোর ডান্ডাস স্কোয়ার, ভ্যাঙ্কুভারের আর্ট গ্যালারীর সামনের মাঠে , মন্ট্রিলের রয়াল মাউন্টেন এবং অটোয়ার পার্লামেন্ট হিলে আজ সমবেত হয়েছিল গঞ্জিকা সেবীরা। কানাডা ব্রডকাস্টিং কর্পরেশান বা সি,বি,সি’র খবরে বলা হয় এবছর অটোয়ার পার্লামেন্ট হিলে ৫ থেকে ৬ হাজার লোক সমবেত হয়েছিল গাজা উৎসবে । ভ্যাঙ্কুভারের গাজা সেবীদের রয়েছে নিজস্ব ওয়েবসাইট http://www.420vancouver.com 

আমেরিকাতে অনান্য বছরের মত গাঁজা উৎসব পালিত হল সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট পার্কে, কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের বোল্ডার ক্যাম্পাসে। নিউজিল্যান্ডের ওটাগ বিশ্ব বিদ্যালয় এবং অকল্যান্ডে। আমেরিকাতে সবচে বড় হল কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁজা উৎসব। ২০১০ সালে ১০, ০০০ লোক জমা হয়েছিল এই গাঁজা উৎসবে এবছর তা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।  

আমেরিকার কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গাঁজা উৎসব। 


বাংলাদেশে গাঁজা উৎসব- বিভিন্ন মাজার, সাধু সন্তদের আখড়ার মেলাতে গাজা খাওয়ার রেওয়াজ আছে। বগুড়ার মহাস্থান গড়ের বাৎসরিক গাঁজা উৎসব পালিত হয় ফাল্গুন মাসের শেষ শুক্রবারে। ঐদিন এখানে ৪০ মন পর্যন্ত গাঁজা খাওয়া হতশুনেছি আজকাল প্রশাসনের বাধার কারনে সে মেলা আর বসে না। সিলেটের শাহ জালালের মাজারের ওরসে, এবং কুস্টিয়ার লালন মেলায় বসা গাঁজা মেলা স্বচক্ষে দেখা। রাজশাহী শহরের অদুরের খেতুরের মেলাও গাঁজা সেবনের জন্য বিখ্যাত মেলা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন